আমরা ইতোমধ্যে ডোমেইন কি, কিভাবে কাজ করে, কিভাবে একটি ফ্রী ডোমেইন রেজিস্ট্রেশান করা যায় তার বিস্তারিত পদ্ধতি স্টেপ বাই স্টেপ জানলাম। এবারে আসা যাক হোস্টিং নিয়ে –
সহজ ভাষায় হোস্টিং বলতে কোন স্পেস বা জায়গাকে বুঝায়। হোস্টিং ছাড়া ডোমেইন চলতে পারে না। আমার ডোমেইন ছাড়াও হোস্টিং চলতে পারে না। এতেই বুঝা যায়, ডোমেইন এবং হোস্টিং একে ওপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ! ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো যে স্থানে রাখা হয় তাকে হোস্টিং বলে বা আমরা জানি।
আরও বিস্তারিতভাবে বুঝতে চেষ্টা করি –
পিসি-তে আমার আমাদের ফাইল, অডিও, ভিডিও বা অন্যান্য যেকোনো ফাইলগুলো হার্ডডিস্কে রাখি, তাই না? প্রয়োজনে আমরা সেগুলো ব্যবহার করি, এডিট বা ডিলিট করি। একইভাবে একটি ওয়েবসাইটও চলে কিছু ফাইল, পেজ, ইমেজ বা কোডের সহযোগিতায়। আমরা যখন ব্রাউজার দিয়ে ফাইল বা পেজগুলোকে কল করি, তখন ওয়েবসাইট আমাদের কল অনুযায়ী সামনে রেজাল্ট দেখায়।
এখন কথা হচ্ছে, আমরা হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে পিসি-তে ফাইল রাখি, ব্যবহার করি। ঠিক ওয়েবসাইটও পিসি থেকেই ব্রাউজ করি, তার ফাইল দেখি, সেগুলো নিয়ে কাজ করি। এটাও ঠিক? তাহলে প্রশ্ন হল, ওয়েবসাইট তার ফাইলগুলো কোথায় রাখে? হুম! এটা খুব সহজ কিন্তু একটি মারপ্যাঁচের ব্যাপার! ওয়েবসাইটও তার ফাইলগুলো হার্ডডিস্কেই রাখে। কনফিউশনে পরে গেলেন? ওয়েবসাইট তার ফাইলের জন্য যে হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে সেটি কোথায় থাকে, এই ভেবে তাই না? হ্যাঁ, কনফিউশনতো বটেই। কারণ এই ব্যাপারগুলো টেকনিক্যালি বুঝতে হবে।
আমরা ওয়েবসাইটের যে ফাইলগুলো ব্যবহার করি সেগুলোও আপনার আমার ব্যবহার করা পিসি’র মতই কোন একটি পিসিতে থাকে। পার্থক্য শুধু একটুকুই, আমাদের পিসিতে ব্যবহৃত হার্ডডিস্কগুলোর সাইজ বর্তমান সময়ের কনফিগারেশন মতে খুব বেশি হলে ১ থেকে ২ টেরাবাইট বা তার কমও হতে পারে। কিন্তু, ওয়েবসাইট যে হার্ডডিস্কে ফাইল রাখে সেগুলো হাজার হাজার টেরাবাইট ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং অনেক উচ্চগতির সিস্টেম সফটওয়্যার, র্যাম, প্রসেসর ব্যবহার করে। কারণ, আমার আপনার মত লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী একই সাথে সেই হার্ডডিস্ক থেকে ফাইল লোড করে, ব্রাউজার করে ইচ্ছা মত এবং নির্বিঘ্নে। এই বিশাল সাইজের হার্ডডিস্ককেই বলা হয় ওয়েব সার্ভার। এটিকে রিমোট সার্ভারও বলা চলে, কারণ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আমরা আমাদের ওয়েব সার্ভারে ঢুকতে পারি, কাজ করতে পারিই, যেমনটা আমারা যেকোনো স্থান থেকে টিভি রিমোট চেপে চ্যানেল পাল্টাই।
মূলত, এই সব কিছুর সমন্বিত রূপটিই হল, ওয়েব হোস্টিং।
ডোমেইনের মত হোস্টিং-ও দুই প্রকার।
১) ফ্রী হোস্টিং –
এইগুলো কোনটি লাইফ টাইমের জন্য ফ্রী, আবার কোনটি কিছু কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করে ফ্রী। প্রথমত ১ বছরের জন্য রেজিস্ট্রেশান করতে হয় এবং পরবর্তী বছর রিনিউ করে আবারও ১ বছর চলাতে হয়। এভাবে আপনি যতদিন কন্টিনিউ করবেন ততদিন। ইন্টারনেটে সার্চ করতে অনেক ফ্রী হোস্টিং সার্ভার পাওয়া যাবে, তার মধ্যে সবচেয়ে পপুলার একটি ওয়েব হোস্টিং সার্ভার হল http://www.000webhost.com/ যারা কাজ শেখার জন্য হোস্টিং নিতে চান কিন্তু টাকা খরচ করতে চান না, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ সাইট। পেইড হোস্টিং-এর অনেক ফিচার এই সার্ভারে রয়েছে। যা আপনি ব্যাবহার করতে এক্সপার্ট হতে পারবেন।
২) পেইড বা প্রিমিয়াম হোস্টিং –
এগুলোর জন্য আপনাকে প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পে করতেই হবে। আপনি চাইলে শুরুতে ১ বছরের জন্য রেজিস্ট্রেশান করে পরবর্তী বছর গুলোতে রিনিউ করে চালাতে পারবেন, নয়তো শুরুর বছরেই একাধিক বছরের জন্য রেজিস্ট্রেশান করে নিতে পারেন। এমন অনেক সার্ভার আছে যারা সর্বনিম্ন ১/৩ মাসেও হোস্টিং দিয়ে থাকে। আপনি ব্যবহার করে তাদের সার্ভারে সন্তুষ্ট হলে লং টাইমের জন্য সাবসক্রিপশন নিতে পারবেন। আবার কোন কোন ওয়েবহোস্টিং কোম্পানি আছে যারা পেইডের পাশাপাশি ফ্রী ওয়েব হোস্টিংও সার্ভ করে। সারা বিশ্বে অনেক পেইড হোস্টিং সেলার কোম্পানি আছে। যেমনঃ http://www.hostgator.com/ আমি নিজেও হোস্টিং সেল করি। চাইলে আমার থেকেও হোস্টিং কিনতে পারেন এই লিঙ্কে গিয়ে – http://www.rangpursource.com/our-services/
যাইহোক, যেহেতু আমরা এখনও শিখার মাঝে আছি এবং শিখছি, তাই আমরা ফ্রী হোস্টিং নিয়েই কাজ করবো। এজন্য আমি আপনাদের http://www.000webhost.com/ এ কিভাবে রেজিস্ট্রেশান করতে হয় তা সচিত্র দেখাবো।
হোস্টিং রেজিস্ট্রেশান –
প্রথমেই http://www.000webhost.com/ অ্যাড্রেসে ভিসিট করি। নিচের মত পেজ পাবো –
এবার Free Hosting প্লানের নিচের দিকে মাউস স্ক্রল করি এবং Sign Up বাটনে ক্লিক করি। তাহলে নিচের মত পেজ পাবো, যেখানে আপনাকে একটি ডোমেইন, নাম, মেইল এবং হোস্টিং অ্যাকাউন্টে লগইন করার পাসওয়ার্ড, ক্যাপচা কোড এবং টার্মস অব সার্ভিসে চেক করে দিতে হবে। ডোমেইনের জন্য দুটি ফিল্ড থাকে। প্রথমটিতে আপনার ডোমেইনের নাম দিন, যেমন আমি সদ্য রেজিস্টার করা website4ebook.tk অ্যাড্রেসটি দিবো। এবার অন্যান্য ইনফোগুলো সঠিকভাবে পূরণ করুণ –
এবার Creat My Account বাটনে ক্লিক করুণ। নিচের মত পেজ পাবেন –
উপরের ইমেজে দেখা যাচ্ছে, অ্যাকাউন্ট Status “Waiting for email confirmation..” তার মানে রেজিস্ট্রেশান হবার পর আমার দেয়া ইমেইল অ্যাড্রেসে একটি ভেরিফিকেশন লিংক পাঠানো হয়েছে অ্যাকাউন্ট কনফার্মেশন ইনফো সহ। এবারে, মেইলে লগইন করলে কনফার্ম ইমেইল দেখতে পাবো পাবো। মেইল টাইটেল/সাবজেক্ট থাকবে “Confirm your registration”. সাবজেক্টে ক্লিক করে মেইল ওপেন করলে নিচের মত কনফার্ম ইনফো পাবো। সেখানেই কনফার্মেশন লিঙ্কে ক্লিক করুণ –
কনফার্মেশন লিঙ্কে ক্লিক করা মাত্র আপনার অ্যাকাউন্টের স্ট্যাটাস দেখাবে “Building…” এবং একটি ওয়েলকাম ইমেইল আসবে মেইলে লগইন ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড। তারপর কয়েক সেকেন্ড ওয়েট করে Refresh Status এ ক্লিক করুণ –
এবারে নিচের মত অ্যাকাউন্ট স্ট্যাটাস এবং একশন এবং আরেকটি Account Ready ইমেইল পাবেন অ্যাকাউন্ট সব লগইন ইনফো সহ –
Active এর অর্থ হল আপনার অ্যাকাউন্ট রেডি এবং আপনি এখন হোস্টিং সিপ্যানেলের সব ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন। এখানে থেকে Go to CPanel লিঙ্কে ক্লিক করুণ। তাহলে নিচের মত সিপ্যানেলের সব ফিচার এবং DNS (Domain Name Server) দেখতে পারবেন –
Warning মেসেজটি ভালো মত খেয়াল করুণ এবং বুঝতে চেষ্ঠা করুণ। আমি বাংলায় এর সারমর্ম ট্রান্সলেট করে দিলাম –
“আপনার ডোমেইনটি আমাদের সার্ভারের সাথে এখনও যুক্ত হয়নি, তাই FTP, Website Builder অথবা File Manager এর মত সার্ভিসগুলো এখন কাজ নাও করতে পারে। আপনার ডোমেইনকে ns01.000webhost.com, ns02.000webhost.com নেমসার্ভার দ্বারা আপডেট করতে হবে। আপনি এই কাজটি করার পরপরই এই ওয়ার্নিং মেসেজটি মুছে যাবে(২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপডেট হবে)”
এখানে বলে রাখা ভালো, আপনার হোস্টিং কোম্পানি অনুযায়ী DNS এর নাম হবে। যেহেতু আমরা 000webhost এর হোস্টিং ব্যবহার করবো, তাই আমাদের DNS হবে – ns01.000webhost.com, ns02.000webhost.com
তো হয়ে গেলো আমাদের হোস্টিং অ্যাকাউন্ট তৈরি কাজ। এরপর দেখবো, কিভাবে ডোমেইন এবং হোস্টিংকে একত্রে কনফিগার করে সার্ভারে আমাদের ওয়েবসাইট পাবলিশ করা যায়। ঃ
আপনাদের এই সম্পূর্ণ বোঝানোর নিয়ম টা আশা করি সবার খুব ভালো লাগবে।
//