ইন্টারনেটে নিজের একটি ওয়েবসাইট থাকলে একটু অন্যরকম লাগে, তাইনা? আপনি হয়তো শখের বসেই ওয়েবসাইট চালাবেন। হয়তো নিজের মনের ভাব প্রকাশ করবেন ব্লগ আকারে অথবা আপনার জ্ঞানকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিবেন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
কিন্তু, নিজের খেয়ে বনের মোষ কতক্ষণ আর তাড়াবেন? অথবা আপনি হয়তো ভাবছেন, ফাইনান্সিয়াল ইনভেস্টমেন্ট যাবার আগে ফ্রি’তেই একবার ওয়েবসাইট চালানোর মজাটা নেয়া গেলে মন্দ হয়না। তাইনা?
জী, আপনাদের জন্য আমার আজকের এই আর্টিকেল। সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবো, তাই মন দিয়ে পড়বেন, না বুঝলে আস্ক করতে পারেন ইনবক্সে বা এখানেও কমেন্ট আকারেও।
তো চলুন শুরু করা যাক –
WordPress.com – ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত খুব কম মানুষই আছেন যারা ওয়ার্ডপ্রেসের নাম শুনে নাই। সারা বিশ্বের ৩৬ শতাংশ ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেসে চলে। ওয়ার্ডপ্রেস এতো জনপ্রিয়তা পাবার কারণ হচ্ছে, এটা সম্পূর্ন ফ্রি প্ল্যাটফর্ম। ওয়েবসাইট করা জন্য অনেক ফ্রি ডিজাইন পাওয়া যায়, যেটাকে আমরা “থিম” নামে জানি। আর প্রয়োজনীয় ফাংশনালিটি যুক্ত করতে চাইলে আছে লাখ লাখ ফ্রি “প্লাগিন”। যেগুলো দিয়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজ করে ফেলতে পারবেন। তবে, সব থিম, প্লাগিন কিন্তু ফ্রি না। এমন অনেক থিম প্লাগিন আছে যা কিনে ইউজ করতে হবে। তবে, ফ্রিগুলো আপনার কাজ হয়ে যাবার সম্ভাবনা ৮০%-এর উপরে। আর নিজে ওয়ার্ডপ্রেস থিম বা প্লাগিন ডেভেলপমেন্ট জানলে তো কোন কথাই নাই। ইচ্ছা মত মডিফাই করতে পারবেন।
তবে, কিছু লিমিটেশন আছেন, যা আর্টিকেলের শেষে আলোচনা করেছি।
Blogger.com – ওয়ার্ডপ্রেসের পর ব্লগার ডট কম জনপ্রিয়। যেহেতু এটি গুগলের নিজেস্ব সার্ভিস, তাই এসইও(এটা সপর্কে না জেনে থাকলে, আমি জানাবো পরে) এর ব্যাপারে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। ওয়ার্ডপ্রেসের মত ব্লগারেও অনেক ফ্রি ডিজাইন(টেমপ্লেট) পাওয়া যায় যা দিয়ে আপনি ওয়েবসাইট সাজিয়ে নিতে পারবেন। তবে, এখানে প্লাগিনের কোন ফ্যাসিলিটি নাই। যা কাজ করতে হয়, সব ডিজাইন নির্ভর এবং নিজে কোডিং পারলে কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন।
Wix.com – ফ্রি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উইকস-কে বলতে পারে বর্তমান ওয়েবের মডার্ন যুগ! ফ্রি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উইকসে এমন অনেক ফিচার আছে যা ওয়ার্ডপ্রেস বা ব্লগারে সরাসরি এখনও আসে নাই। ওয়ার্ডপ্রেস ডট কমে কিছুটা আসছে, কিন্তু সেটাও পেইড ভার্সনে। যেমনঃ মনে করেন, ইকমার্স ফ্যাসিলিটি। এছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেসের মত বিগ জায়েন্টদের সাথে পাল্লা দিতে তারা নিত্য নতুন ফিচার যুক্ত করেই চলছে। তবে, সেসব ফিচার সব পাবেন পেইড ভার্সনে। একবার নিজেই wix.com সাইটে ঘুরেই আসুন না। তাহলে নিজেই বুঝবেন।
Weebly.com – ওয়েবলি এর ফিচার অনেকটাই উইকসের। ফ্রি প্যাকেজে মোটামুটি বেশ অনেকগুলো কাজ করতে পারবেন। তবে এক্সটেনটেড ফিচার পেতে হলে পেইড ভার্সনে যেতে হবে।
Yola.com – ইয়োলা-কে বলতে পারেন ফ্রি’র মধ্যে সবচেয়ে কিপটা প্ল্যাটফর্ম। ফ্রি প্যাকেজে আপনি মাত্র ২টা পেজ তৈরি করতে পারবেন। তাই, এটা নিয়ে বেশি কিছু বলার নাই। নিজেই ঘুরে আসুন yola.com থেকে।
এগুলো বাদেও নেটে খুঁজলে আরও অনেক ফ্রি প্ল্যাটফর্ম পাবেন। তবে, এই ৫টি প্ল্যাটফর্ম উল্লেখযোগ্য।
এবার আসা যাক ওয়ার্ডপ্রেস সহ অন্যসবগুলো প্ল্যাটফর্মের সুবিধা-অসুবিধান নিয়ে আলোচনা করিঃ
সুবিধাঃ
১। ফ্রি ওয়েবসাইট চালানোর ফ্লেভার পাবেন সবগুলো প্ল্যাটফর্মেই।
২। আলাদা করে ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হবে না।
৩। লাইফ টাইম ফ্রি চালাতে পারবেন।
৪। কোডিং জানলে নিজের মত কিছু কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন।
৫। ফাইনান্সিয়াল ইনভেস্টমেন্টের আগে কিছু হলেও ওয়েবসাইট চালানোর জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
অসুবিধাঃ
১। আপনি নিজ ব্র্যান্ডে ওয়েবসাইট হবে না। যেমনঃ rangpursource.wordpress.com এভাবে সাইটের অ্যাড্রেস হবে। এটাকে সাবডোমেইন ব্রান্ডিং বলে।
২। ১/২ টি প্ল্যাটফর্ম বাদে, অন্য কেউই আপনাকে ভাল মত সাপোর্ট দিবে না। সো, প্রবলেমে পড়লে গুগল মামার শরণাপন্ন হয়া ছাড়া উপায় নাই।
৩। ফ্রি প্ল্যাটফর্ম হবার কারণে, আপনাকে তারা পেইড ভার্সনে যাবার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখাবে, যেটা আপনার কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে।
৪। ডোমেইন হোস্টিং যেহেতু কিনতে হচ্ছে না, তাই ওয়েবসাইটটিও আপনার নিজের কন্ট্রোলে থাকবে না। একটু টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে না মিললে যেকোনো সময়, বুম!!
৫। নিজের কন্ট্রোলে না থাকার কারণে, সময় দিয়ে আপনি যত কনটেন্ট ওয়েবসাইট অ্যাড করে রাখবেন, সেগুলো হারিয়ে ফেলতে পারেন যদি কোন কারণে ওয়েবসাইট সাসপেন্ড করে দেয় টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে না মিললে।
সুবিধা অসুবিধা সবই বললাম, আপনারা চাইলে গুগল করে চেক করে নিতে পারেন আরও কোন বিবিধা বা অসুবিধা আছে কিনা। তবে আমি আবারও বলবো, যাদের বিজনেসে সিরিয়াসনেস আছে, তারা ডোমেইন হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইটের ১০০% কন্ট্রোল নিজের কাছে রাখতে পারেন। আর যাদের ইনভেস্টমেন্ট প্রবলেম বা হঠাৎ বুঝে উঠছেন না কি করবেন, তারা ফ্রি প্ল্যাটফর্মগুলো ইউজ করে দেখতে পারেন। তবে, কনটেন্টের ব্যাকআপ সবসময় নিজের কাছে রাখবেন। তাহলেই ফ্রি প্ল্যাটফর্মও আপনার জন্য নির্ভাবনার কারণ হতে পারে।
সো, বুঝাতে পারলাম তো? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। কোথায় না বুঝলে কমেন্টে বা ইনবক্সেও জানাতে পারেন।
~ ধন্যবাদ।