- ইকমার্স বিজনেসের নামে ডোমেইনঃ ডোমেইনের নাম নির্বাচন
- ইকমার্স বিজনেসের নামে ডোমেইনঃ জেনে নিন ১০টি সুবিধা/উপকারিতা!
- ইকমার্স বিজনেসের নামে ডোমেইনঃ জেনে নিন কেনার পূর্বে ১০ট আবশ্যিক সতর্কতা!
- ইকমার্স বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিংঃ হোস্টিং কি এবং কেনার পদ্ধতি
- ইকমার্স বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিংঃ জেনে নিন ১০টি সুবিধা/উপকারিতা!
- ইকমার্স বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিংঃ জেনে নিন কেনার পূর্বে ১০ট আবশ্যিক সতর্কতা!
আপনার প্রিয় উদ্যোগকে ইকমার্স বিজনেসে রূপান্তর করার প্রথম ধাপে আপনাকে ডোমেইন ক্রয় করতে হবে। আপনারা হয়তো অনেকেই সেটা করে ফেলেছেন ইতোমধ্যেই। যারা কিনেন নাই, দ্রুত কিনে ফেলুন। ডোমেইন থাকার সুবিধা বা উপকারিতা এবং ডোমেইন কেনার আগে অনেকগুলো বিষয়ে সতর্কতা থাকতে হয়। সেটি আমি আগেই আলোচনা করেছি।
হোস্টিং কি বা কেনও, সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি আগে। পর্বে। তাই, এবারে আলোচনা করবো হোস্টিং থাকার ১০টি সুবিধা ও উপকারিতা নিয়ে। আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইট থাকার জন্য আপনাকে অবশ্যই দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে ডোমেইনের সাথে হোস্টিং যুক্ত করতে হবে।
প্রশ্ন হল – ওয়েবসাইট করার জন্য ডোমেইনের সাথে কেন হোস্টিং যুক্ত করতে হয়? হোস্টিং যুক্ত করলে আপনি কি কি সুবিধা বা উপকারিতা পাবেন? যেমনটা ডোমেইন কিনে পেয়েছিলেন? চলুন আপনাদের সাথে ধারাবাহিকভাবে হোস্টিং থাকার ফলে ১০টি সুবিধা বা উপকারিতা আলোচনা করিঃ
১। ওয়েবসাইট তৈরি
আর্টিকেল টাইটেল দেখেই বুঝা যাচ্ছে, হোস্টিং নেয়ার মূল কারণ হচ্ছে ওয়েবসাইট তৈরি করা। সেটা হোক ব্যবসায় কিংবা ব্যক্তিগত কাজের ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে, ডোমেইন কেনার পর আপনার কাজ হবে হোস্টিং সেটআপ করে নেয়া। আপনার ওয়েবসাইট আপনি নিজেই (যদি পারেন) তৈরি করেন অথবা প্রোফেসনাল কাউকে দিয়ে করিয়ে নেন, সেটা ৩য় পদক্ষেপ। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ওয়েবসাইট করার জন্য আপনাকে আগে ভাগেই হোস্টিং নিতে হবে।
আরেকটি বিষয় খুবই, ইম্পরট্যান্ট, আপনি ডোমেইন নেয়ার সাথে সাথেই হোস্টিং নিয়ে নিতে চেষ্টা করবেন, এতে আপনার ওয়েবসাইট করাতে দেরি থাকলেও, হোস্টিং থাকার কারণে, ডোমেইনটি / আপনার উদ্যোগের নামটি সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স / যুক্ত হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যে। যেটা আপনাকে আপনার উদ্যোগ বা ব্র্যান্ডকে প্রচারণার কাজে অনেক দিক থেকেই বাড়তি সহায়তা করবে।
২। ওয়েবসাইটের কন্ট্রোল
আপনি যখন ফ্রি কোন প্ল্যাটফর্মে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, সেখানে আপনি তেমন কোন সুবিধাই পাবেন না। এমনকি আপনি দিনের পর দিন কষ্ট করে যত কনটেন্ট এবং রিসোর্স তৈরি করে ওয়েবসাইটে দিলেন, সেটারও কোন ব্যাকআপ রাখেন নাই। কারণ, আপনিতো জানেন ফ্রি হলেও ওয়েবসাইটটা তো আপনার। নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, আসলেই আপনার কি না? ওয়েবসাইটের কনটেন্টগুলোই শুধু আপনার, বাকি সব কিছু সেই ফ্রি প্ল্যাটফর্মের।
এখন মনে করেন, নিজের অজান্তেই এমন কোন কাজ করে বসেছেন, যার কারণে সেই ফ্রি প্ল্যাটফর্ম আপনাকে সাস্পেন্ড বা ব্যান করে দিলো। এবার ভাবুন… পাবেন সেই কনটেন্টগুলো আর ফিরে আনতে? স্পেশালি গুগল ব্লগার সাইট হলেতো কথাই নাই। সাস্পেন্ড মানেই সব শেষ।
কিন্তু, নিজের ডোমেইন এবং হোস্টিং আপনার ওয়েবসাইট রানিং থাকলে, আপনি কখনই এই বিপদে পড়বেন না ১০০% সিওর থাকেন। তাই, যারা একটু হলেও সিরিয়াস, সামান্য কিছু টাকা খরচ করে ডোমেইনের পাশাপাশি হোস্টিং-ও কিনে তারপর ওয়েবসাইট চালাবেন। মনে রাখবেন, ফ্রি মানেই মানেই নানা রকম জটিলতা এবং প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে। নিজের ডোমেইন হোস্টিং-এ ওয়েবসাইট করা মানে ১০০% কন্ট্রোল আপনার নিজের হাতে। 🙂
৩। ইমেইল অ্যাকাউন্ট
ডোমেইন থাকার সুবিধা নিয়ে আর্টিকেলে একটি পয়েন্ট লিখেছিলাম “ডোমেইন ব্রান্ডিং” নামে। সেখানে নিজ ডোমেইনে ইমেইল অ্যাকাউন্ট থাকার গুরুপ্ত নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আসলে ব্যাপারটি হচ্ছে, আপনি অবশ্যই আপনার উদ্যোগের নামে নেয়া সেই ডোমেইন দিয়ে ইমেইল করতে পারবেন, সেটা ইচ্ছা মতো পরিবর্তন বা বাতিল করে দিতে পারবেন। তবে সেটা অবশ্যই হোস্টিং সেটআপ করার পর। হোস্টিং ছাড়া সাধারণ ভাবে ইমেইল অ্যাকাউন্ট/আইডি তৈরি করা যায় না। এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল, আপনার হোস্টিং প্রোভাইডার যদি ডোমেইন তৈরি করার সংখ্যার মধ্যে কোন রেস্ট্রিকশন দেন, তবে আপনি সেই সংখ্যক আইডি’র বেশি ইমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন না।
৪। ফাইল ম্যানেজমেন্ট
আপনি যখন ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, সেখানে অবশ্যই বিভিন্ন রকমের ফাইল রাখবেন, তাইনা? আপনি না রাখলেও আপনার ডেভেলপার কিন্তু অবশ্যই ফাইল রাখবেন। কারণ, হোস্টিং নেয়ার মূল কারণটাই হল আপনার ওয়েবসাইটের সবরকমের ফাইলগুলো হোস্ট করা বা সেভ করে রাখা। এতে আপনি ওয়েবসাইটের যেকোনো পেজের যেকোনো জায়গায় কোন ফাইলটি আছে, সেটিও খুঁজে বের করতে পারবেন, প্রয়োজনে এডিট করতে পারবেন। হোস্টিং ছাড়া আপনি কোন অবস্থাতেই ফাইল হোস্ট করতে পারবেন না।
৫। ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট
ইদানীংকালের ৯০% এর বেশির ভাগ ওয়েবসাইট ডায়নামিক হয়ে থাকে। আর প্রতিটা ডায়নামিক সাইট ডাটাবেজ ব্যবহার করে। আপনার ওয়েবসাইটের জন্য রেডিমেইড সল্যুশন ইউজ করেন অথবা কাস্টম সল্যুশন, সবক্ষেত্রেই ডাটাবেজ লাগবেই। যেমনঃ আপনি যখন ইকমার্স ওয়েবসাইট করাবেন, সেই সাইটে কত রকম ডাটা রেকর্ড/সেভ হবে তা আপনি জানেন? কাস্টবার ইনফর্মেশন, অর্ডার ইনফর্মেশন, পেমেন্ট ইনফর্মেশন, কুপন(যদি থাকে) ইনফর্মেশন, শিপিং ইনফর্মেশন, বিলিং ইনফর্মেশনসহ আরও অনেক রকম হিডেন ডাটা আপনার হোস্টিং-এর ডাটাবেজে সেভ হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এবার ভাবুনতো, হোস্টিং ছাড়া এগুলো করা সম্ভব? কখনই না!
৬। সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন
ওয়েবসাইটকে এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজনেশন করার সময় ওয়েবসাইটের এমন অনেক ফাইলে সার্চ ইঞ্জিনের ভেরিফিকেশন কোড বসাতে হয়। আবার অনেক সময় গুগল এ্যানালাইটিকস (গুগলের স্ট্যাটিস্টিক্যাল ডাটা আনালাইসিস সার্ভিস) এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটে ভিজিটির ট্র্যাকিং করার জন্য তাদেরও কোড বসাতে হয়। এছাড়াও এসইও করার জন্য আরও নানান রকম টুলস ব্যবহার করা হয়, যেটা হোস্টিং এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট সেটআপ করা থাকলেই শুধুমাত্র ব্যববার করা সম্ভব। তো, কি মনে হচ্ছে এখন? শুধু ডোমেইন দিয়েই সব কিছু হয়ে যাবে? ডোমেইন হচ্ছে আপনার ব্র্যান্ড / উদ্যোগের নামে ইন্টারনেটে একটি ঠিকানা। আর হোস্টিং হচ্ছে, সেই ঠিকানাকে তার গন্তব্য (ওয়েবসাইটে) পৌঁছে দেয়া মাধ্যম।
৭। ডাটা আপডেট/ডিলিটঃ
যেহেতু আপনি হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করেছেন বা করবেন বলে নিয়ত করেছেন, তাই একটা বিষয় খুব ভালভাবে আগে থেকেই জানা জরুরি। মনে করেন আপনি ওয়েবসাইট ডেভেলপ করিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু, হঠাৎ মনে হল, কোন একটা ফাইলে কোন ইনফর্মেশন আপডেট বা ডিলিট করা দরকার। এখন কি করবেন?
আগেই বলেছি, হোস্টিং থাকলেই শুধুমাত্র ওয়েবসাইটের ফাইল হোস্ট করাতে পারবেন এবং এটা আপডেট / ডিলিটের সব কাজ করতে পারবেন। কিন্তু কিভাবে? এমনি এমনিতো আপডেট / ডিলিট হবেনা। তাইনা? হোস্টিং প্যানেলে “File manager” নামে একটা ফিচার আছে। সেটির মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের যেকোনো ফাইল ম্যানেজ করতে পারবেন যখন সময় যেকোনো প্রয়োজনে। হোস্টিং নেয়া না থাকলে, এগুলো করতে পারতেন? কখনই না!
৮। ডাটা ব্যাকআপ/রিস্টোর
ডাটা ব্যাকআপ এবং রিস্টোর অনেক গুরুপ্তপুর্ন একটি ফিচার হোস্টিং প্যানেলের। মনে করেন, আপনি ইতোমধ্যেই কোথাও (হতে পারে সস্তা টাইপ কোথাও) হোস্টিং নিয়েছেন। কিন্তু, কিছুদিন যাবার পর বুঝলেন, সেখানে আর থাকা যাবে না। এখন আপনার কাজ হচ্ছে, আপনার হোস্টিং প্যানেলের সব ডাটা ব্যাকআপ করা। তারপর নতুন কোথাও হোস্টিং নিয়ে সেটা রিস্টোর করা। অথবা, আপনি প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে ওয়েবসাইট + ডাটাবেজের ফাইল নিজের পিসি-তে সেভ করে রাখতে চান। তাহলে কি করবেন? হ্যাঁ, “ব্যাকআপ” করবেন। হোস্টিং প্যানেলের মাধ্যমে এই কাজগুলো খুব সহজেই করা যায়।
৯। রিমোট অ্যাক্সেস
আমরা জানি “রিমোট” বলতে দূরবর্তী কোন স্থান আর জিনিসকে বুঝায়। যা দূরে থেকেও কন্ট্রোল করা যায়। ঠিক ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও এমনটা। হোস্টিং এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে আমরা চাইলে যেকোনো স্থান থেকে অ্যাক্সেস / ব্যবসার করতে পারবো। এমনকি, ডাটা আপডেট করা, ব্যাকআপ/রিস্টোর করা সহ যেকোনো কাজ করা সম্ভব হোস্টিং থাকলে। এবার কি বুঝতে পারছেন ডোমেইন এর পরপরই হোস্টিং কতটা গুরুত্ব রাখে ওয়েবসাইট করা এবং সেটা পরিচালনার ক্ষেত্রে?
১০। সিকিউরিটি
নিজের ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা কে না চায়? আপনি এতো এতো টাকা খরচ করে নিজের ডোমেইন, হোস্টিং এবং ওয়েবসাইট করালেন। সেটা যদি এক্মুহুর্তে কোন কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সত্যি ব্যাপারটা হতাশার হবে। তবে হয় নেই, হোস্টিং থাকা মানেই নির্ভয়ে থাকার আরেকটি নিশ্চয়তা। হোস্টিং এবং ওয়েবসাইট, এই ২টি সিস্টেম একসাথে ওয়েবসাইটের জন্য অনেক বড় এবং শক্তিশালী সিকিউরিটি তৈরি করতে পারে, এমন অনেক ইন্টারনাল এবং এক্সটারনাল ফিচার আছে যেগুলো ব্যাবসার করলে হোস্টিং এবং ওয়েবসাইট ২টাই সিকিউর থাকবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু, আবার ভাবুন তো, হোস্টিং ছাড়া এগুলো করতে পারবেন? 😀 নাহ! কখনই না।
আপনার উদ্যোগ/ব্যবসায়ের জন্য কি ডোমেইন হোস্টিং কিনেছেন? না কিনে থাকলে এখানে থেকে ডোমেইন নাম চেক করে দেখুন সেটি ফাঁকা আছে কিনা। ফাঁকা থাকলে কিনে ফেলুন দ্রুতই। আর এখানে থেকে হোস্টিং কিনে ফেলুন। ডিস্কাউন্ট পেতে কমেন্ট করুণ।
একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে বিভিন্ন ক্লায়েন্টকে ডোমেইন হোস্টিং রিলেটেড সার্ভিস দিতে গিয়ে দেখেছি, নিজের বিজনেসের নামে ডোমেইন কিনে থাকলেও হোস্টিং থাকার উপকারিতা বা সুবিধা অনেকেই জানেন না। শুধু নিতে হবে, তাই ডোমেইন নিয়ে রেখে দেন। হোস্টিং যেহেতু আপনার ইকমার্স বিজনেসের দ্বিতীয় ধাপ, তাই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই এই লিখাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কারও উপকার হলে আমার ভালো লাগবে।
আশা করি হোস্টিং-এর ব্যাপারে আপনাদের ধারণা এখন অনেকটাই ক্লিয়ার। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন।