ইকমার্স বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিংঃ হোস্টিং কি এবং কেনার পদ্ধতি

ইকমার্স বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিংঃ হোস্টিং কি এবং কেনার পদ্ধতি

This entry is part 4 of 6 in the series ডোমেইন হোস্টিং
Print Friendly, PDF & Email

ইকমার্স ব্যবসা করতে গেলে যে বিষয়গুলো জানতে হয় তার মধ্যে ডোমেইনের পর পরই হোস্টিং সম্পর্কে জানা সবচেয়ে গুরুপ্তপূর্ন। আপনি ইতোমধ্যেই হয়তো ডোমেইন কিনে নিয়েছেন। এখন ভাবছেন, এবার ওয়েবসাইটটা করেই ফেলবেন। কিন্তু কিভাবে? ডোমেইন দিয়ে আপনার উদ্যোগের নাম পরিচিত পাবে এবং হোস্টিং রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে আপনি ওয়েবসাইট তৈরির ২য় ধাপ সম্পন্ন করবেন।

এখন কথা হচ্ছে, ডোমেইন কি বা কেন, তা ইতোমধ্যেই বুঝে ফেলেছেন। এবার বুঝার পালা হোস্টিং নিয়ে।

জানার জন্য প্রস্তুত তো? আসুন আপনার প্রিয় উদ্যোগকে ইকমার্সে রূপান্তর করার স্বপ্নের দ্বিতীয় পদক্ষেপ “হোস্টিং কি এবং কেনার পদ্ধতি” সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

হোস্টিং কি?

সহজ ভাষায় হোস্টিং হচ্ছে ইন্টারনেটে কোন একটি জায়গা, যেখানে আপনি আপনার কোন তথ্য রাখবেন এবং তা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে দেখবেন/রক্ষণাবেক্ষণ করবেন এমন একটি মাধ্যম। সাধারণভাবে, আমার কোন একটি ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিং ব্যবহার করি। কারণ, ওয়েবসাইটের টেক্সট, ইমেজ, অন্যান্য ফাইল, অডিও/ভিডিও কন্টেন্ট (যদি থাকে) এগুলো ওয়েবসাইটে দেখানোর জন্য আমাদের হোস্টিং ব্যবহার করতে হয়। হোস্টিং ছাড়া, ওয়েবসাইট চালাতে পারবেন না। যেমনঃ microsoft.com, facebook.com, google.com প্রতিটিই আলাদা আলাদা হোস্টিং-এ চলে। ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানি অনুযায়ী হোস্টিং-এর প্যাকেজ, ফিচার এবং দাম নির্ভর করবে।

হোস্টিং কয়েক ধরণের হয়। কার্যকারিতা এবং প্রয়োজন ভেদে কয়েকধরণের হোস্টিং দেখতে পাবেন। যেমনঃ শেয়ারড হোস্টিং, রিসেলার হোস্টিং, ভিপিএস হোস্টিং, ডেডিকেটেড হোস্টিং। তবে, শেয়ারড হোস্টিং বাদে অন্য ৩টি হোস্টিং নেয়া হয় ৯০% সময়েই হোস্টিং সেলিং বিজনেস করার জন্য, আর কিছু বাকি ১০% বা তার কিছু কম বা বেশি ব্যবহার করে অনেক বড় সাইজ ওয়েবসাইট এবং ভিজিটরের জন্য।
আমরা যেহেতু, নিজেদের বিজনেস ওয়েবসাইট তৈরি করবো, তাই আমাদের জন্য আপাতত জানার বিষয় শেয়ারড হোস্টিং সম্পর্কে। সময় এবং প্রয়োজনের সাপেক্ষে অন্য হোস্টিং সম্পর্কেও জানানো হবে। তো চলুন শুরু করা যাক…

শেয়ারড হোস্টিং মূলত পার্সনাল বা ছোট থেকে মাঝারি সাইজ বিজনেসের ওয়েবসাইটের জন্য ব্যবহার করা হয়। এখন জানার বিষয়, এই শেয়ারড হোস্টিং প্যাকেজে কি কি থাকে, কেমন দাম হতে পারে ইত্যাদি…

শেয়ারড হোস্টিংঃ

সাধারণত ব্যক্তিগত বা ছোট থেকে মাঝারি সাইজের ব্যবসায়ের ওয়েবসাইট, যেগুলোতে মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার বা সর্বোচ্চ ২/৩ লক্ষ ভিজিটর আসবে, এমন ওয়েবসাইট চালানোর শেয়ারড হোস্টিং ব্যবহার করা যায়। নূন্যতম ১জিবি থেকে শুরু করে ৫০জিবি পর্যন্ত শেয়ারড হোস্টিং ইউজ করা হয়। এর বেশি দরকার হলে, হোস্টিং প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করে প্যাকেজ আপগ্রেড করে নেয়া যায়। তবে সমস্যা হচ্ছে, শেয়ারড হোস্টিং-এ আপনি ইচ্ছামত হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার ইউজ করতে পারবেন না। আপনার হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানি যা কনফিগারেশন দিবে সেটাই আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। শেয়ারড হোস্টিং-এর একটি প্যাকেজের উদাহরণ দেখা যাকঃ

Disk space: 1000MB (1GB)
Bandwidth: 25000MB (25GB)
Email account: Unlimited
MySQL database: Unlimited
Subdomain: Unlimited

নোটঃ উপরোক্ত প্যাকেজের ফিচারগুলো উদাহরণ হিসেবে দেয়া। কখনও এর চেয়ে কম বা বেশিও হতে পারে।

এখন দেখা যাক কোনটা কি কাজে লাগেঃ

Disk space:

ডিস্ক স্পেস হচ্ছে, আপনার ওয়েবসাইটের জন্য যে ফাইল/ডাটা গুলোর হোস্টিং –এ রাখবেন তার ধারণ ক্ষমতা। 1000MB বা যে সাইজের প্যাকেজ আপনি ইউজ করবেন, তার উপর ভিত্তি করে আপনাকে ডিস্ক স্পেস ইউজ করতে হবে। আপনি চাইলে অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করে নতুন করে ফাইল আপলোড করতে পারবেন যদি ডিস্ক স্পেস বাড়াতে ইচ্ছুক না হন। যেমনঃ আমরা ফোন মেমোরি কার্ড ইউজ করি, ঠিক এমনটা।

Bandwidth:

অনেকেই ডিস্ক স্পেস এবং ব্যান্ডউইথকে একই বিষয় মনে করে, এটা ভুল ধারণা। ব্যান্ডউইথ হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটে ১ মাসের ডাটা ট্রান্সফারের পরিমাণ। মনে করুণ, আপনার ওয়েবসাইটে ৫ মেগাবাইট সাইজের একটি ফাইল আছে। সেই ফাইলটি আপনার ওয়েবসাইট থেকে ৫০০ জন ডাউনলোড করলো। তাহলে আপনার মোট ব্যান্ডউইথ খরচ হল – 5MB x 500 = 2500MB। তাহলে আপনার হোস্টিং-এ মাসে 25000MB/25GB ব্যান্ডউইথের মধ্যে 2500MB খরচ হবে এবং ডিস্ক স্পেস কিন্তু ঐ ৫ এমবি-ই খরচে আছে। এছাড়াও, সাধারণভাবে আপনি নিজেই আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করলেও ব্যান্ডউইথ খরচ হবে। কারণ, আপনি যে পেজটিকে লোড হবার জন্য রিকোয়েস্ট/ব্রাউজ করছেন, তারও একটা ওয়েট/সাইজ আছে, হতে পারে সেটা MB/KB সাইজে, তাইনা? তাই যারা ভাবছেন নিজে ভিজিট না করলে বা কোন কিছু ডাউনলোড না করলে ব্যান্ডউইথ খরচ হবেনা, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

Email account:

অনেকে প্রশ্ন করেন, ওয়েব হোস্টিং-এর সাথে ইমেইল অ্যাকাউন্টের সম্পর্ক কি? কারণ, আমি yahoo, gmail বা live মেইল ইউজ করি। হ্যাঁ সম্পর্ক আছে, আপনি yahoo, gmail বা live মেইল ইউজ করে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস কি পাচ্ছেন? apnarid@yahoo.com / apnarid@gmail.com / apnarid@live.com – এমনটা, তাইনা? বাস্তব একটি উদাহরণ দেই, আমার বিজনেস ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস rarngpursource.com, আমি চাইছি আমার ওয়েবসাইট অ্যাড্রেসের সাথে মিল রেখে একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করবো। যেমনটা ডোমেইন নিয়ে আর্টিকেলে বলেছিলাম। মনে আছে?
এজন্য আমার অবশ্যই হোস্টিং থাকতে হবে, শুধু ডোমেইন থাকলেই আপনি ইমেইল করতে পারবেন না। আমি হোস্টিং নিয়েছি এবং একটি ইমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছি – mail@rangpursource.com, ঠিক এভাবে আপনিও তৈরি করতে পারবেন। তবে, আপনার হোস্টিং প্রোভাইডার যতগুলো ইমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করার অ্যাক্সেস দিবে, তার বেশি তৈরি করতে পারবেন না।

MySQL database:

মাইএসকিউএল বা মাইসিকুয়েল ডাটাবেজ বা অন্য যেকোনো ডাটাবেজ প্রোগ্রাম দরকার হয় ডাইন্যামিক সাইট চালানোর জন্য। যেখানে ইউজার, প্রোডাক্ট বা আরও অন্যান্য ইনফর্মেশন সেভ হয়ে থাকবে। যেমনঃ ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা বা অন্যকোন সিএমএস ডাটাবেজ ছাড়া চালানো সম্ভব হয়না। এছাড়াও আপনি কাস্টম বিল্ড যেকোনো ডাইন্যামিক সাইট চালাতে চাইলে ডাটাবেজ দরকার হবে। আর এই জন্যই মাইসিকুয়েল ডাটাবেজ। এক্ষেত্রেও আপনার হোস্টিং প্রোভাইডার যতগুলো ডাটাবেজ তৈরি করার অ্যাক্সেস দিবে, তার বেশি তৈরি করতে পারবেন না। আমাদের থেকে হোস্টিং কিনলে আপনি আনলিমিটেড ডাটাবেজ তৈরি করতে পারবেন।

Subdomain:

ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরির ৫টি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে একটি আর্টিকেল শেয়ার করেছিলাম। মনে আছে? না থাকলে গ্রুপে খুঁজে পড়ে ফেলুন। সাব-ডোমেইন হচ্ছে একটি সাইটের আন্ডারে সম্পূর্ণ আলাদা আরেকটি সাইট। যেমনঃ আমাদের মূল সাইট হচ্ছে – rarngpursource.com আর সাব-ডোমেইনে আরেকটি সাইট হচ্ছে – blog.rangpursource.com বা premium.rangpursource.com। আপনার হোস্টিং সিপ্যানেল থেকে সাব-ডোমেইন তৈরি ও ম্যানেজ করতে পারবেন। তবে এটি তৈরি করার লিমিটও আপনার হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছে। আমাদের থেকে হোস্টিং কিনলে আপনি আনলিমিটেড ডাটাবেজ তৈরি করতে পারবেন।
উপরোক্ত ৫টি বিষয় সবচেয়ে গুরুপ্তপূর্ন। কিন্তু, এগুলো ছাড়া আরও বেশ কিছু ব্যাপার আছে যা এখন বললেও আপনারা বুঝবেন না। তাই, আপাতত এটুকুই শেয়ার করলাম। তবে, অন্য ব্যাপারগুলো নিয়েও আলোচনা করবো অন্য কোন সময়ে।

নোটঃ সবগুলো ফিচার পরবর্তীতে বাড়ানোর প্রয়োজন হলে আপনার হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

কোথায় থেকে হোস্টিং কিনবেন?

হোস্টিং কোথায় থেকে কিনবেন সেটা নিয়ে দ্বিধাদণ্ডের শেষ নাই আমাদের মাঝে। দেশি বা বিদেশি কোম্পানি থেকে হোস্টিং নেয়া নিয়েও রয়েছে নানান মতভেদ। তবে, ব্যাপারটি সম্পূর্ণ পরিস্থিতি এবং অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভরশীল। তবে, আমি প্রেফার করি শুরুর দিকে বা সবসময় দেশি কোম্পানি থেকে ডোমেইন হোস্টিং নেয়া। কারণঃ

১। সরাসরি ফোন কলে সাপোর্ট পাবেন। বাহিরের কোম্পানির মত ওয়েটিং লিস্টে থাকতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
২। অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে পে করার ঝামেলা পোহাতে হবে না। ব্যাংক, বিকাশ বা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে পে করতে পারবেন।
৩। খরচ ছাড়াই আপনার জন্য একটি বেসিক সাইট সেটআপ করে দিবে (আমরা দেই)।
৪। আপনার ছোটখাটো ইস্যুতে ওয়েবসাইট সাসপেন্ড করে এক্সটা চার্জ নিবে না (সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না)।
৫। রিনিউয়ালে অর্থনৈতিক প্রবলেম থাকলেও সাইট ডাউন থাকবেনা, যদি ভাল সম্পর্ক বজায় করতে পারেন। সাপোর্ট টিকেট রিকোয়েস্ট দিয়ে দিন গুনতে হবে না। অনেক ক্ষেত্রে ইনস্ট্যান্ট বা সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টার মধ্যে রিপ্লে/সল্যুশন পাবেন। এগুলো অনেক বড় সাপোর্ট।

এছাড়াও দেশি কোম্পানি থেকে ডোমেইন হোস্টিং নেয়ার আরও অনেক সুবিধা আছে, যা শুধুমাত্র সার্ভিস দেয়ার পরই বুঝতে পারবেন। সুবিধার পাশাপাশি যেগুলো অসুবিধা আছে সেটা অবশ্যই নতুন প্রভাইডারদের মধ্যে দেখা যায়, যেমনঃ টেকনিক্যাল স্কিল কম, সার্ভার অনেক চিপ রেটে কেনার কারণে সিকিউরিটি কম পাবেন, ওয়েবসাইট ডাউন থাকতে পারে, সল্যুশন পেতে দিনের পর দিন ওয়েট করতে হবে, এমন আরও অনেক কিছু হতে পারে। আপনারা হয়তো অনেকেই ফেসবুকে খেয়াল করে থাকেন, “৫০০-১০০০ টাকায় ৫জিবি হোস্টিং সাথে ডোমেইন ফ্রি”। এমনসব বিজ্ঞাপন দেখে ভুলেও তাদের থেকে ডোমেইন হোস্টিং নিবেন না। কম দামে সার্ভিস সেল করার পর অনেকেই হতাশ হতে শুনেছি প্রোভাইডারের অনৈতিক আচরণের কারণে। আচ্ছা আপনারাই চিন্তা করুন তো, এতো কম দামে কিভাবে এতো গুলো সার্ভিস দেয়া সম্ভব?

আপনার উদ্যোগ/ব্যবসায়ের জন্য কি ডোমেইন হোস্টিং কিনেছেন? না কিনে থাকলে এখানে থেকে ডোমেইন নাম চেক করে দেখুন সেটি ফাঁকা আছে কিনা। ফাঁকা থাকলে কিনে ফেলুন দ্রুতই। আর এখানে থেকে হোস্টিং কিনে ফেলুন। ডিস্কাউন্ট পেতে কমেন্ট করুণ। 🙂

একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে বিভিন্ন ক্লায়েন্টকে ডোমেইন হোস্টিং রিলেটেড সার্ভিস দিতে গিয়ে দেখেছি, নিজের বিজনেসের নামে ডোমেইন কিনে থাকলেও হোস্টিং থাকার উপকারিতা বা সুবিধা অনেকেই জানেন না। শুধু নিতে হবে, তাই ডোমেইন নিয়ে রেখে দেন। হোস্টিং যেহেতু আপনার ইকমার্স বিজনেসের দ্বিতীয় ধাপ, তাই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই এই লিখাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কারও উপকার হলে আমার ভালো লাগবে।

আশা করি হোস্টিং-এর ব্যাপারে আপনাদের ধারণা এখন অনেকটাই ক্লিয়ার। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন।

Series Navigation<< ইকমার্স বিজনেসের নামে ডোমেইনঃ জেনে নিন কেনার পূর্বে ১০ট আবশ্যিক সতর্কতা!ইকমার্স বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিংঃ জেনে নিন ১০টি সুবিধা/উপকারিতা! >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.