অনলাইনে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম একটি আলোচিত ইস্যু হচ্ছে স্টপ অনলাইন পাইরেসি অ্যাক্ট বা সোপা। সামাজিক যোগাযোগ আর মাইক্রোব্লগিং সাইটগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ লক্ষ্য করছি, এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কও চলছে বেশ। সোপার প্রতিবাদে সরব পুরো ইন্টারনেট বিশ্ব। মূলত উইকিপিডিয়া, মজিলা আর টুইটপিকের মতো সাইট সোপা বাস্তবায়ন উদ্যোগের প্রতিবাদে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পরই বিষয়টি বেশি আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশী সব মিডিয়ায়ই ফলাও করে প্রচার করেছে (১, ২), টেলিভিশন মিডিয়াগুলোও আলাদা করে বিশেষ সংবাদ দেখাচ্ছে। অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সোপা-র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে। তবে অনেকেই জানেন না এই সোপা আসলে কি, আর কেনই বা এটি আমাদের জন্য ক্ষতিকর হবে।
সোপা কি..
সোপা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের একটি প্রস্তাবিত বিল। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাস হওয়ার পর আইনে পরিণত হবে অর্থাৎ এ বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি আইন বলে গণ্য হবে। গতবছরের ২৬ অক্টোবর সোপা বিলটি প্রথম উত্থাপিত হয়। মূলত কপিরাইট ও মেধা-স্বত্ব রক্ষা করার জন্য এ বিলটি পাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বা কপিরাইট রক্ষার জন্য আইনটি করার কথা বলা হলেও এটি আসলে পুরো ইন্টারনেটই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণেরই একটি উদ্যোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি সমালোচনা করা যেখানে অন্যান্য দেশগুলোর জন্য অনেক কঠিন সেখানে ইন্টারনেটই একমাত্র মাধ্যম। এখানে একজন সাধারণ মানুষও যুক্তরাষ্ট্রের দোষ নিয়ে কথা বলতে পারে, সমালোচনা করতে পারে। আমার ধারণা, এ সমালোচনাটাই সহ্য হচ্ছেনা এ পরাশক্তির, এ কারণেই এ ধরণের আইনের কথা চিন্তায় এনেছে তাঁরা। ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতার কথা যেমন প্রস্তাবিত বিলটিতে আছে, তেমনি আছে জেল জরিমানা-র কথাও!
এটি কেন আমাদের জন্য ক্ষতিকর..
আগেই বলেছি যে আসলে সোপা আসলে ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করার ফাঁদ। এটির অধিকাংশ ধারা ই সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকার হরণ করার জন্য লিখিত। প্রস্তাবিত এ বিলটি মোটামুটি ৮০ পৃষ্ঠার, যাদের যথেষ্ট ধৈর্য আছে তারা পড়ে দেখতে পারেন। এ বিলটির গভীরে ঢুকতে চাইলে পুরোটি পড়ে দেখার অনুরোধ। তবে যথেষ্ট ধৈর্য ও সময় না থাকলে পড়ার দরকার নেই, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো আমি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এ বিলটি কি জন্য আমাদের জন্য বিপজ্জনক সেগুলো আলোচনা’র আগে দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে নেয়া যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট
যে ওয়েবসাইটগুলোর ডোমেইন নাম যুক্তরাষ্ট্রের কোন নিবন্ধণকারী কর্তৃক বিক্রি হয়ে থাকে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট হিসাবে গণ্য হবে। ইন্টারনেটে অনেক ধরণের ডোমেইন এক্সটেনশন রয়েছে, এরমধ্যে টপ-লেভেল ডোমেইন নাম হিসাবে .COM, .NET, .ORG .INFO বেশি আলোচিত। এ ডোমেইন এক্সটেনশন গুলো সব যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধণকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আমাদের কিনতে হয়। যেমন প্রিয়.কম এর ওয়েবসাইট এক্সটেনশন .COM। অর্থাৎ এটি যুক্তরাষ্ট্রের কোন নিবন্ধণকারী প্রতিষ্ঠান (জিকেজি.নেট) থেকে কেনা হয়েছে, আর তাই বাংলা ভাষার কনটেন্ট থাকলেও এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট হিসাবেই বিবেচনা করা হবে। পারতপক্ষে যত শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইট রয়েছে সবই যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট হবে। সোপা’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিদেশী ওয়েবসাইট
খেয়াল করে থাকবেন টপ-লেভেল ডোমেইন নাম ছাড়া প্রত্যেকটি দেশের আলাদা আলাদা ডোমেইন এক্সটেনশন রয়েছে। যেমন বাংলাদেশের .COM.BD, ভারতের .CO.IN ইত্যাদি। এগুলো নিবন্ধণের দায়িত্ব স্ব স্ব দেশের, যেমন .COM.BD বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বিটিসিএল ইস্যু করতে পারে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এগুলোকে তাই বলা হচ্ছে বিদেশী ওয়েবসাইট। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট ছাড়া বাকি সবই বিদেশী ওয়েবসাইট। এধরণের ওয়েবসাইটও সোপা আইনের আওতায় পড়বে। কিভাবে পড়বে তা পরবর্তীতে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
কপিরাইট ভঙ্গ আসলে কি
প্রথমেই বলে নেই, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় কপিরাইট ভঙ্গ করার মতো আর সহজ আর কোন কাজ আছে কি না আমার জানা নেই!
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে, অন্যের কপিরাইট করা আছে বা অন্যের মেধা-স্বত্ব নষ্ট হয় এমন কোন কনটেন্ট ইন্টারনেটে যেসব ওয়েবসাইটে থাকে সেগুলো কপিরাইট ভঙ্গকারী। যেমন: হলিউডি বা বলিউডি প্রত্যেকটা মুভিরই কপিরাইট স্বত্ব উক্ত মুভির প্রযোজকের। এখন অন্যকেউ সে মুভির কোন অংশ বা গান কোন ওয়েবসাইটে আপলোড করতে পারবে না। তাহলে মুভি প্রযোজকের কপিরাইট ভঙ্গ হয়। আবার কোন সফটওয়্যারের যে ‘সিরিয়াল কি’ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়, সেসব ওয়েবসাইট উক্ত সফটওয়্যার নির্মাতা কপিরাইট স্বত্ব ভঙ্গ করছে।
ধরুন, আপনি ইন্টারনেটের কোন ওয়েবসাইট থেকে একটি ছবি নিলেন, সে ছবিটি যে একজনের কপিরাইট করা সেটি খেয়ালই করলেন না! এবার ছবিটি যখনই আপনি অন্যকোন ওয়েবসাইটে ব্যবহার করবেন তখনই আপনি কপিরাইট আইনে অপরাধী হয়ে গেলেন!
আবার ধরুন, প্রিয় ডটকমের প্রতিটি নিউজের নিচে যে কমেন্ট বক্স আছে সেখানে একজন পাঠক এমন একটি ছবি পোস্ট করলো যেটি আসলে কোন প্রতিষ্ঠানের কপিরাইট করা, অথবা একটি হলিউডি মুভির অবৈধ ডাউনলোড (যেমন টরেন্ট) লিংক যুক্ত করে দিল। এখন অনেক কমেন্টের মাঝে হয়ত প্রিয় ডটকমের অ্যাডমিন সে মন্তব্যটি খেয়াল করলো না বা ইচ্ছাকৃত-ভাবে মুছে দিল না। তাহলে আইন অনুযায়ী প্রিয় ডটকম কপিরাইট ভঙ্গ করছে! অর্থ্যাৎ সোপা অনুযায়ী প্রিয় ডটকম বন্ধ করে দেয়া যাবে এবং প্রিয় ডটকমের মালিককে জেল-জরিমানা দুটোই করতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল।
এবার সরাসরি সোপা বিলের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু ধারা এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো দেখবো আমরা।
কি ক্ষমতা নেই এটর্নি জেনারেলের?
প্রস্তাবিত এ বিলটিতে এমন সব ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যে ধারাবলে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ঠুনকো অভিযোগেও যেকোনো ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিতে পারবে। ধারা ১০২(এ)(২) তে কপিরাইট ভঙ্গের অভিযোগে বিদেশী যেকোনো ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলকে। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেল কে যেসব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেগুলো প্রয়োগের আগে ওয়েবসাইটের মালিক ঘুণাক্ষরেও কোন নোটিফিকেশন পাবেন না! তার ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে গেলেই কেবল তিনি জানবেন যে তিনি কপিরাইট ভঙ্গ (!) করেছিলেন।
ক. কোন ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে কপিরাইট ভঙ্গের অভিযোগ আসার পর এটর্নি জেনারেল যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি কে নির্দেশ দিতে পারবেন উক্ত ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস ব্লক করে দিতে। আর সেটি পাঁচদিনের মধ্যে বন্ধ করে দিতে বাধ্য থাকবে আইএসপি। [ধারা: ১২০(সি)(২)(এ)(আই)]
খ. কপিরাইট ভঙ্গ (!) করছে এমন কোন ওয়েবসাইট ইনডেক্স করতে পারবে না সার্চ ইঞ্জিনগুলো (গুগল/বিং)। সার্চ ইঞ্জিন থেকে এধরণের ওয়েবসাইটের লিংক মুছে ফেলতে (ডি-ইনডেক্সড) হবে এবং সার্চ ফলাফলে তা প্রদর্শন করা যাবেনা। [ধারা: ১২০(সি)(২)(বি)]
গ. কোন ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে কপিরাইট ভঙ্গের অভিযোগ আসলে এটর্নি জেনারেল উক্ত ওয়েবসাইটের সব বিজ্ঞাপন (গুগল অ্যাডসেন্স বা ফেডারেটেড মিডিয়া) বন্ধ করে দিতে পারবেন। যেমন, আমার পরিচিত এক ছোটভাই মুভি ডাউনলোডের একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করে। বিনিময়ে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে সে মোটা অংকের টাকাও পায়। এখন সাইটটিতে যেহেতু অবৈধভাবে মুভি ডাউনলোডের লিংক শেয়ার করে তাই এটির বিরুদ্ধে এটর্নি জেনারেল ব্যবস্থা নিতে পারবে, বন্ধ করে দিতে পারবেন ওয়েবসাইটটির গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট। [ধারা: ১২০(সি)(২)(ডি)]
ঘ. কপিরাইট ভঙ্গকারী (!) ওয়েবসাইটের পেমেন্ট প্রসেসর (পেপাল, ভিসা, মাস্টারকার্ড, মানিবুকার ইত্যাদি) বন্ধ করে দিতে পারবেন এটর্নি জেনারেল। যেমন: আমার এক ভারতীয় বন্ধু ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস বিক্রি করে। যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সে এ সার্ভিস বিক্রি করে সেখানে সে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন নিয়ে নিয়মিত ব্লগিংও করে। এখন কোন ব্লগপোস্ট লেখার সময় যদি সে অবৈধ (!) কোন কনটেন্ট শেয়ার করে তাহলে সে যে পেপাল অ্যাকাউন্ট দিয়ে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে টাকা নেয় সে পেপাল অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিতে পারবেন এটর্নি জেনারেল! [ধারা: ১২০(সি)(২)(সি)]
গান গাইলেও তিন বছরের জেল!
সাইবার স্পেসের বাসিন্দাদের জন্য আরও একটি ভয়ানক ধারা হচ্ছে ২০১(বি)(১)। এটি যতটা না ভয়ংকর তারচেয়ে বেশি হাস্যকরও বটে। এতে মূলত সংগীতের পাইরেসি রোধ করার কথা বলা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী আপনাকে একটি গান গাওয়ার জন্যই ৩ বছরের জেল খাটতে হবে, জরিমানা দিতে হবে হাজার হাজার ডলার। কিভাবে? সেটিই এখন বলবো।
ধরুন আপনি লেডি গাগার খুব ফ্যান। হয়ত তাঁর ‘বোর্ন দিস ওয়ে’ গানটি খুব পছন্দ। আবার আপনি গান গাইতেও ভালোবাসেন, এখন সখের বসে আপনি লেডি গাগার ‘বর্ন দিস ওয়ে’ গানটি গাইলেন, সেটি নিজের হ্যান্ডিক্যাম দিয়ে রেকর্ডও করলেন। এরপর বন্ধুদের দেখানোর জন্য সেটি ইউটিউবে আপলোড করলেন। এখন গানটি যদি ৫ হাজার বার দেখা হয় তাহলে আপনি পাঁচ হাজার বার লেডি গাগা’র ‘বোর্ন দিস ওয়ে’ প্রযোজকের কপিরাইট ভঙ্গ করলেন! যেহেতু আমাজনে গানটি .৯৯ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, তাই পাঁচ হাজার বার গানটির কপিরাইট ভঙ্গ করার (!) শাস্তিস্বরুপ (.৯৯*৫০০০) ৪৯৫০ ডলার জরিমানা দিতে হবে আপনাকে। এখানেই শেষ নয়, শাস্তিস্বরুপ ৩ বছর জেলও খাটতে হবে। কি ভয়ংকর! একটি গান গাওয়ার জন্যই আপনাকে ভোগ করতে হবে এত শাস্তি! আপনার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে ‘ক্রিমিনাল’ শব্দটি!!!
আবার ধরুন আপনার বিয়ের ভিডিওর সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে মানানসই ইংলিশ গান লাগাই নিলেন, এরপর সে ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করলেন। এজন্যও আপনি কপিরাইট আইনের প্যাঁচে পড়বেন, জেল জরিমানা দুটোই হবে এ ঠুনকো কারণে!
বন্ধ হবে সব ইউজার জেনারেটেড সাইট!
ইউজার জেনারেটেড সাইট বলতে আসলে বোঝাচ্ছি যেসব ওয়েবসাইটে সাধারণ ব্যবহারকারীরা কনটেন্ট আপলোড করতে পারেন। যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, ফ্লিকার, উইকিপিডিয়া বা ড্রপবক্সের মতো সাইটগুলো। ইউটিউবে সবাই যেমন যেকোনো ভিডিও শেয়ার করতে পারেন তেমনি ফেসবুকেও আপলোড করা যায় যেকোনো ছবি। এখন ফেসবুকের ৮০ কোটি ব্যবহারকারীর কোন একজন যদি কপিরাইট ভঙ্গ করে একটি ছবি আপলোড করেন তাহলে এটর্নি জেনারেল চাইলে সোপা বিলের ১০৩ ধারা অনুযায়ী কপিরাইট ভঙ্গের অভিযোগে (!) পুরো ওয়েবসাইটটিই বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন! একই ঘটনা ইউটিউবের ক্ষেত্রেও। কেউ কপিরাইট ভঙ্গ করে (!) একটি ভিডিও আপলোড করলে সে অভিযোগে পুরো ইউটিউব সাইটটিই বন্ধ করে দেয়া যাবে এ আইন অনুযায়ী!
এখানে একটু বলে রাখি, ইউটিউব এবং ফেসবুকের মতো সাইট এসেছে উদাহরণ হিসাবে। হয়ত এটর্নি জেনারেল এসব সাইট কখনো বন্ধ করবেন না তবে একই ধরণের অভিযোগে মাঝারি বা ছোট ধরণের লাখো ওয়েবসাইটই বন্ধ হয়ে যাবে! আর ইউজার জেনারেটেড কনটেন্ট তৈরির যে ধারা তা এ আইনের ভয়াবহতায় ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিদেশী ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে কি হবে?
লেখার প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট এবং বিদেশী ওয়েবসাইট এ দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটগুলোর নিয়ন্ত্রণ দেশটির নিজস্ব আইন অনুযায়ী তাই সেসব ওয়েবসাইট বন্ধ করা তাদের কাছে তুড়ি দেয়ার মতো ব্যাপার হয়ে যাবে।
আর বিদেশী ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে কি হবে? উদাহরণ দেই, মিউজিক.কম.বিডি সাইটে প্রচুর গান পাওয়া যায় ডাউনলোড করার জন্য। এখন এ সাইটের কোন লিংক যদি কোন যুক্তরাষ্ট্রের সাইট ব্যাকলিংক করে তাহলে উক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাইটকেও বন্ধ করে দেয়া যাবে! সার্চ ইঞ্জিন এসব সাইটকে ডি-ইনডেক্সড করে দিতে বাধ্য হবে। আইএসপিগুলো বিদেশী ওয়েবসাইটের আইপি ব্লক করে দিবে। সর্বোপরি কপিরাইট অনুযায়ী মামলার সুযোগ তো রয়েছে কপিরাইট হোল্ডারের! ব্যাপার হচ্ছে, এ আইনের মাধ্যমে পুরো ইন্টারনেট বিশ্বই নিয়ন্ত্রণের অধীনে চলে আসবে!
সর্বোপরি আরও যা হবে
স্বল্প পরিসরে বিলটির প্রত্যেকটি ধারা নিয়ে লেখা সম্ভব নয়। সর্বোপরি আইনটি সম্পর্কে যা বলা যায় তা হচ্ছে, এটি ইন্টারনেটকে একটি অন্ধকার যুগে নিয়ে যাবে। কনটেন্ট শূন্য হয়ে পড়বে পুরো সাইবার স্পেস। মেধাস্বত্বের নামে মুক্ত জ্ঞানচর্চা বন্ধ হবে পুরোপুরি।
আইনটিতে অস্পষ্ট অনেক বিষয় রয়েছে, রয়েছে বেশকিছু ফাঁকফোকরও। এ ফাঁক গলিয়ে এর ব্যাপক অপব্যবহার হবে, ভুক্তভোগী হবে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।
মানবাধিকার কর্মী হিসাবে যারা কাজ করেন বা গোয়েন্দাগিরি করে বিভিন্ন তথ্য যারা ফাঁস করেন তাদের রুখতে এ আইন ব্যাপকভাবে ব্যবহার হবে। উইকিলিকস এর মতো সাইট মুহূর্তেই ধ্বংস করে ফেলা যাবে, নতুনভাবে আর এধরণের সাইট গড়ে ওঠার কোন সুযোগ থাকবে না।
এটি ইন্টারনেটের সার্বিক নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ বলা যেতে পারে। ইন্টারনেটে মুক্তমত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটি অগ্রধাপ হিসাবে কাজ করবে।
অনেকে হয়ত বলবেন সোপা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আইন, তাতে আমাদের বাংলাদেশীদের সমস্যা কি? তাদের জন্য বলি, আমাদের সমস্যা মার্কিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এ আইনের সূত্র ধরে যেকোনো অভিযোগে বাংলাদেশ থেকেও যে কাউকে ধরে নিয়ে যেতে পারবে মার্কিন প্রশাসন।
সোপা-কে না বলি
যুক্তরাষ্ট্রের এধরণের ‘ডাকাতি আইন’ করার উদ্যোগকে ধিক্কার। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে লাখো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে দিবোনা আমরা। যেভাবেই হোক সোপা রুখতেই হবে আমাদের। জেগে উঠতে হবে- কথা বলতে ভয়ংকর বিপজ্জনক এ আইনের বিপক্ষে। বিশ্বাস, মুক্তমতের জয় হবেই।