রমজানের ইফতার এবং ঢাকার যানজট!

বাংলাদেশে মুসলমানদের জন্য রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দের। এটা এমন একটা মাস, যে সময় মানুষ তাঁর আত্মশুদ্ধি করতে পারে এবং ধনী গরীবের মাঝের দূরত্বও কমে আসে। সেই পবিত্র মাস আবার এসেছে ফিরে। এই মাসের আর একটা তাৎপর্য হচ্ছে এর পরেই আসে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। মূলত বাড়ির ছোটরা আশায় থাকে ঈদে নতুন কাপড় পাবে, সেই সাথে সালামী ও মিলবে বড়দের কাছ থেকে।

তবে পুরো রমজান মাস জুড়ে রাজধানী ঢাকা শহরে থাকে একটা উৎসবের আমেজ।হরেক রকমের ইফতার সামগ্রীর বাজার বসে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। বাড়ির সবাই মিলে একসাথে ইফতার করা, অফিসে ইফতার পার্টি, বন্ধুদের সাথে মিলে ইফতার পার্টি কিংবা ট্র্যাফিক জ্যামে আটকা পড়ে রাস্তায় ইফতার করা, সবই দেখা যায় এই রাজধানী ঢাকায়। মানুষের সুবিধার জন্য এই মাসে অফিসের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়। মোটামুটি ৩ টার পর থেকে মানুষজন ঘরমুখো হতে থাকে। তবে ঢাকা শহরের একটা প্রধান সমস্যা হচ্ছে তীব্র যানজট। তাই অনেকের হইত পরিবারের সাথে একসাথে বসে ইফতার করার ইচ্ছা থাকলেও তাদেরকে রাস্তায় ইফতার করতে হচ্ছে। রমজানের সময় মূলত সকাল বেলা অফিস শুরুর আগে এবং দুপুর ৩ টার পর থেকে সাধারনত রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায়।

এই পরিস্থিতি চলতে থাকে ইফতারের আগ পর্যন্ত। এরপর আবার রাস্তাঘাট সব ফাঁকা হয়ে আসে। ঢাকা শহরের বিশেষ কিছু এলাকা আছে যেখানে যানজট খুবই প্রকট। এইগুলো হচ্ছে সায়েদাবাদ, মহাখালী, ফার্মগেট, শাহবাগ মোড়, আসাদগেট, কল্যাণপুর, যাত্রাবাড়ী, পল্টন, গুলিস্তান এবং এলিফ্যান্ট রোড এলাকা। এমনিতেই এখন প্রচন্ড গরম, সেই সাথে এই দীর্ঘ যানজট রোজাদারদেরকে আরও বেশি ক্লান্ত করে তুলছে। ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ৪০ মিনিট এমনকি ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেখা যাচ্ছে পেশাদার মানুষের কর্মঘন্টার একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে রাস্তায় যানবাহনে বসে। এতে করে মানুষের কর্মদক্ষতা যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি যানবাহনের জ্বালানী খরচও বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। ইফতারের আগের সময়টাতে গণপরিবহনে নুন্যতম দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে পড়ে। নারীদের জন্য পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গাড়িতে উঠার পর তাদেরকে পোহাতে হয় যানজটের ঝামেলা। সবমিলিয়ে সময়টা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে যাদের নিজস্ব গাড়ি থাকে, তাদের জন্য কিছুটা হলেও পরিস্থিতি সুবিধাজনক। তাদেরকেও যানজটে অপেক্ষা করতে হয় ঠিকই কিন্তু তারপরও তাঁরা নিরাপদে বাসায় পৌঁছাতে পারে, পরিবারের সাথে তাদের ইফতার করতে পারে। এই বিসয়ে ওয়েবসাইটে ঘাঁটাঘাঁটির সময় একটা সুন্দর ইনফোগ্রাফ দেখতে পেলাম যা কিনা ইফতারের আগে যানজট পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছে খুব সহজে এবং ছবির মাধ্যমে। সেই সাথে বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন গাড়ির পারফর্মেন্স ও সেখানে দেখতে পেলাম, যা কিনা গাড়ির মালিকদেরকে সময়ের একটা ধারনা দিবে। বিষয়টি আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারলাম না।

way to home before iftar time

সুত্রঃ কারমুদি জার্নাল

সাধারণ মানুষের মনে প্রতিনিয়তই প্রশ্ন জাগে কেন এই তীব্র যানজট? এর থেকে পরিত্রাণের কি কোন আশা নেই? তথ্যমতে দেখা গেছে, রমজানের বাড়তি আয়োজন এবং একই সময়ে ঘরে ফেরার তাগিদে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া, যত্রতত্র অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি, গাড়ির চালকদের আইনলংঘন করে অন্য রুটে গাড়ি চালানো, যেখানে সেখানে পারকিং, ঈদের আগাম কেনাকাটা ইত্যাদিও এই যানজটের কারন। এই যানজট থেকে মুক্তির আশায় নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। এখন দেখার বিষয় পরবর্তী দিনগুলো কেমন যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.